দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ দ্রুত বাড়ছে

রেমিট্যান্স প্রবাহ

নিউজ ডেস্ক : পবিত্র ঈদ উৎসবের আগে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে, যা জুনের ২৩ দিনে ১.৭৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিদেশ থেকে অর্থ প্রেরনকারীরা  মে মাসে ১.৬৯ বিলিয়ন ডলার এবং এপ্রিলে ১.৬৮ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছে।

 

১ জুন থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে দেশে সবচেয়ে বেশি ২৯১ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে । এ ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংক দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে, যার মাধ্যমে এসেছে ১১৫ মিলিয়ন ডলার এবং বেসরকারী বাণিজ্যিক প্রিমিয়ার ব্যাংক তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে,  যার মাধ্যমে এসেছে  ১১৪ মিলিয়ন ডলার।

 

অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ বেশিরভাগ সূচক নিম্নমুখী থাকলেও এতদিন প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল তুলনামূলক গতিশীল। এবার এই রেমিট্যান্স প্রবাহ নিয়ে উদ্বেগজনক তথ্য দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। গত আগস্টে প্রবাসীরা যে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন—তা গত ছয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, গত বছরের আগস্টের তুলনায় সদ্য বিদায়ী আগস্টে রেমিট্যান্স কমেছে ২১.৫৭ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, গত বছরের আগস্টে রেমিট্যান্স (বৈধ চ্যানেলে) এসেছিল প্রায় ২.০৪ বিলিয়ন ডলার।

 

এছাড়া, গত চার বছরের আগস্ট মাসের তুলনায় এ বছরের আগস্টেই সর্বনিম্ন পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে। যা কমতে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

যদিও আগের যেকোনও সময়ের চেয়ে বিভিন্ন দেশে শ্রমিক রফতানি বেড়েছে। এ বছরের প্রথম ছয় মাসে বিভিন্ন দেশে গেছেন ৬ লাখ ১৮ হাজার শ্রমিক। আর গত বছর (২০২২) শ্রমিক গেছেন রেকর্ড পরিমাণ ১১ লাখ ৩৬ হাজার। বিদেশে এভাবে শ্রমিক যাওয়া বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই রেমিট্যান্স বাড়ার কথা। কিন্তু রেমিট্যান্সের এই নিম্নমুখী প্রবণতা থেকে বের হতে পারছে না বাংলাদেশ।

 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, প্রবাসীরা গত জুন মাসে পাঠিয়েছিলেন ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার। পরের মাস জুলাইয়ে রেমিট্যান্স আসে ১৯৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার। আর আগস্টে এসেছে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার। জুলাইয়ে দেশের ব্যাংকিং বা বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে মোট ১.৯৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। এই হিসাবে, জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে রেমিট্যান্স কমেছে ১৮.৭৮ শতাংশ।

 

প্রবাসী আয়ের এই পতনের বিষয়ে ব্যাংকাররা বলছেন, বাজার দরের চেয়ে ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে ডলারের কম দাম দিচ্ছে প্রবাসীদের। এতে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমে, বেড়ে গেছে হুন্ডি। আগস্ট মাসে ব্যাংক খাতে ডলারের দর ছিল ১০৯ টাকা। সেখানে হুন্ডিওয়ালারা ১১৭ থেকে ১১৯ টাকা দরে প্রতি ডলারের সমপরিমাণ বাংলাদেশি টাকা প্রবাসীদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে।

 

বেশিরভাগ ব্যাংক কর্মকর্তার মন্তব্য হলো—খোলা মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম বেশি থাকায় প্রবাসীরা হুন্ডির মাধ্যমকে বেছে নিয়েছে। এ কারণে আনুষ্ঠানিক বা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্সের এমন পতন হয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকের সঙ্গে খোলাবাজারে ডলারের দামের পার্থক্য প্রায় ৮ টাকা। আর ব্যাংকের চেয়ে খোলাবাজারের রেট অনেক বেশি হওয়ায় হুন্ডিতে টাকা পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন প্রবাসীরা। বিশেষ করে প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে যাদের মাসিক আয় কম এবং যারা অবৈধ, তারা হুন্ডিতেই টাকা পাঠাতে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন। ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলে কমে যাচ্ছে রেমিট্যান্স।

Related Post:
দেশে প্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন সমৃদ্ধির জানান দিচ্ছে : পলক